Saturday, April 26, 2025
Tour & Travel News(Flavour Of Bengal)spot_img
Homeদেশবাংলা বছরের শেষ উল্লেখযোগ্য লোকউৎসব গাজন উৎসব দেখুন,

বাংলা বছরের শেষ উল্লেখযোগ্য লোকউৎসব গাজন উৎসব দেখুন,

Spread the love

ওয়েব ডেস্ক : বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বাঙালির বছরের শেষ উৎসব গাজনে মেতে ওঠে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল। শিবঠাকুরকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই উৎসবের অঙ্গ হিসেবে থাকে নানান লোকাচার, যা বাংলার সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য নিদর্শন বললে ভুল হবে না। গাজন মূলত শিব, নীল, মনসা ও ধর্মঠাকুরের পূজাকেন্দ্রিক উৎসব। স্থানভেদে নামও আলাদা। যেমন মালদহে গাজনের নাম গম্ভীরা আবার জলপাইগুড়িতে গমীরা। বাংলা পঞ্জিকার চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ জুড়ে সন্ন্যাসী বা ভক্তদের মাধ্যমে শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। আর চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পুজোর পর এই উৎসব শেষ হয়। ধর্ম ঠাকুরের গাজন সাধারণ ভাবে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখ, জৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে। চৈত্রমাস ছাড়া বছরের অন্যসময় যে শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয় তাকে ‘হুজুগে গাজন’ বলা হয়। সাধারণ ভাবে তিনদিন ধরে চলে গাজন উৎসব। এই উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল মেলা। ফলে গাজন উপলক্ষে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে মেলা বসে। কলকাতার কাছে উত্তর ২৪ পরগনার জলেশ্বরে বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে গাজন উৎসব দেখতে যেতে পারেন। ভালো লাগবে। গাজনের সন্ন্যাসী বা ভক্তরা নিজেদের শরীরকে নানা ভাবে কষ্ট দিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে শিবকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। গাজন উপলক্ষ্যে শোভাযাত্রা করে শিবমন্দিরে বা ধর্ম ঠাকুরের মন্দিরে যান ভক্তরা বা সন্ন্যাসীরা। শিবের গাজনে দু’জন সন্ন্যাসী শিব ও গৌরী সেজে এবং অন্যান্যরা নন্দী, ভৃঙ্গী, ভূতপ্রেত, দৈত্যদানব সং সেজে নৃত্য করতে থাকেন। শিবের নানা লৌকিক ছড়া বলেন তাঁরা। গান করেন। চৈত্র মাসের গাজনে কালী নাচ একটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান।
গাজন কথাটি ‘গর্জন’ শব্দ থেকে এসেছে। গাজন সন্ন্যাসীরা ‘দেবাদিদেব মহাদেবের জয়’, ‘জয় বাবা বুড়ো শিবের জয়’, ‘ভাল বাবা শিবের চরণের সেবা লাগে’ এসব ধ্বনি দিয়ে গর্জন তোলেন। অপর একটি মত অনুযায়ী বলা হয়, ‘গা’ বলতে গ্রামকে বোঝায়। আর ‘জন’ বলতে বোঝায় জনগণ। সাধারণ মানুষের উৎসব হওয়ায় তাই এর নাম হয় গাজন। সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, গাজন উৎসবের দিন শিবের সঙ্গে কালীর বিবাহ হয়। আর গাজন সন্ন্যাসীরা সেই বিয়ের বরপক্ষ। চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়কপুজোর উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে শিবের গাজন শেষ হয়। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে শিবের উপাসক বাণ রাজা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মহাদেবকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের গায়ের রক্ত দিয়ে নাচ-গান পরিবেশন করেছিলেন। তাই চড়কের শিবভক্ত সন্ন্যাসীরা আজও বান ফোঁড়ান, নানা ধরনের ঝাঁপ দেন। এর বেশির ভাগই অত্যন্ত কষ্টের। নানা অদ্ভূত আচার অনুষ্ঠানও থাকে। জীবনের ঝুঁকিও নেন সন্ন্যাসীরা। বাংলার কোথাও কোথাও গাজনে নরমুণ্ড নিয়ে নাচও দেখা যায়। বাংলার মঙ্গলকাব্যেও গাজনের উল্লেখ পাওয়া যায়। ধর্মমঙ্গল কাব্যে উল্লেখ রয়েছে যে, ধর্মকে তুষ্ট করতে গাজন পালন করেছিলেন রাণী রঞ্জাবতী। গাজন বা চরক শুধুই শিবের আরাধনা হলেও এই উৎসব পালিত হয় ধর্মরাজকে ঘিরেও। আর দুই দেবতার পুজোতেই জাতপাতের ভেদাভেদ ভেঙে যে কেউ অংশ নিতে পারে। পুরাণেও গাজনের উল্লেখ রয়েছে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে রয়েছে– ‘‘চৈত্র মাস্যথ মাঘেবা যোহর্চ্চয়েৎ শঙ্করব্রতী। করোতি নর্ত্তনং ভক্ত্যা বেত্রবানি দিবাশিনম্।। মাসং বাপ্যর্দ্ধমাসং বা দশ সপ্তদিনানি বা। দিনমানং যুগং সোহপি শিবলোক মহীয়তে।।’’ অর্থাৎ, চৈত্র মাসে কিংবা কোনও শিবভক্ত যদি মাঘ মাসে এক, সাত, দশ, পনেরো কিংবা তিরিশ দিন বেতের লাঠি হাতে নিয়ে নৃত্য করেন তবে তিনি শিবলোকে যাবেন।
গাজন উৎসবের মূলত তিনটি অংশ— ঘাট-সন্ন্যাস, নীলব্রত ও চড়ক। আগে মূলত চৈত্রের প্রথম দিন থেকেই ভক্তরা সন্ন্যাস পালন করতেন। এখন কেউ চৈত্র সংক্রান্তির সাত দিন আগে, কেউ বা তিন দিন আগে থেকে কঠোর নিয়ম পালন করেন। সন্ন্যাস পালন করেন বলে তাঁরা গেরুয়া বস্ত্র পরেন এবং হবিষ্যি গ্রহণ করেন। একটি দলের মধ্যে এক জন মূল সন্ন্যাসী এবং এক জন শেষ সন্ন্যাসী হিসেবে থাকেন। উৎসবে এই দু’জনেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। চৈত্রের শুরু থেকেই ধ্বনিত হয় ‘বাবা তারকনাথের চরণে সেবা লাগে…’। এই সময় প্রান্তিক শ্রেণির নারী-পুরুষ সন্ন্যাস পালন করেন। কেউ কেউ আবার শিব-পার্বতী সেজে ভিক্ষা করেন। সারাদিন বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে আতপচাল, রাঙালু, কাঁচাআম, কাঁচকলা এবং অর্থ সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় তাঁরা পাক করা অন্ন গ্রহণ করেন।
বাংলার এক এক প্রান্তে গাজনের সন্ন্যাসীদের এক একরকম দেখা যায়। যেমন, মুখোশ নৃত্যের প্রচলন রয়েছে বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, নদিয়া, বীরভূম জেলায়। প্রথা অনুসারে পূজারীর কাছ থেকে শিবের পুজোর ফুল গ্রহণ করে প্রতীকী শিবলিঙ্গ মাথায় করে ঢাক ঢোল কাঁসর বাজিয়ে শোভাযাত্রায় বের হন সন্ন্যসীরা। এ ছাড়াও মুখোশ নাচের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় পৌরাণিক নানা চরিত্র, দেব-দেবী, রাক্ষস, এমনকী পশুদের রূপও। এ ছাড়াও কালী সেজে, মুখোশ পরে কালীনাচ করেন কেউ ক্কেউ।
গাজনের পরের দিন পালিত হয় নীল পুজো। গ্রামবাংলার মহিলারা সন্তানের মঙ্গল কামনায় এ দিন গাজনের সন্ন্যাসীদের ফল, আতপচাল, ও অর্থ দান করেন। চৈত্রের শেষ দিনে হয় চড়ক উৎসব। বেশ কিছু নিয়ম আছে এই উৎসবের। যেমন, চড়ক গাছটিকে শিবমন্দিরের কাছের কোনও পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হয়। সন্ন্যাসী সেটিকে তুলে আনেন গাজনতলায়। তার পরে চড়কগাছ পুজো করে তা চড়কতলায় পোঁতা হয়। এর পরে শুরু হয় মূল চড়কের অনুষ্ঠান।
গাজন উৎসব দেখতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জলেশ্বর শিবমন্দিরে চলুন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টেয় এই মন্দিরের ঘাটে সন্ন্যাসীরা স্নান করবেন। এরপর বেলা ৫টায় শুরু হবে শালভাঙা পর্ব। এই পর্বে বিশেষ সন্ন্যাসী খেজুরগাছের মাথায় উঠে খেজুরকাটার উপর দিয়ে হাটবেন। পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার নীলপুজো। সন্ধ্যায় বাউল ও লোকসংগীতের অনুষ্ঠান এবং শনিবার মেলা এবং বটিঝাপ পর্ব। রবিবার বাবা জলেশ্বরের শিবপুকুরে গমন এবং বুধবার পর্যন্ত মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

Santanu Chatterjee
Santanu Chatterjeehttps://flavourofbengal.com
Santanu Chatterjee is a Tax & Financial Consultant and Food Safety Mitra by profession.But he is an amateur wildlife and bird photographer,He also loves to travel, so model photography and travel photography are very important to him.,He is also a Journalist, Tour Facilitator (Indian Tourism Government of India), Tourist Guide (West Bengal Government).
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Translate »