ওয়েব ডেস্ক : বেড়াতে যাবেন? অফবিট গন্তব্য খুঁজছেন? ঘুরে আসুন থানাদার থেকে। ভালো লাগবে। হিমাচল প্রদেশের একটি ছোট্ট গ্রাম থানাদার। এটি রাজধানী শহর সিমলা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রায় ৮০০০ ফুট (২৪০০ মিটার, যা সিমলার থেকে সামান্য বেশি) উচ্চতায় অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রাম। দেশের প্রথম আপেল বাগানগুলির মধ্যে একটি রয়েছে এখানে। থানাদারের আশেপাশের অঞ্চলে প্রচুর বাগান রয়েছে। সেখানে চেরি, স্ট্রবেরি এবং আপেল প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ভিড়, কোলাহল থেকে দূরে এবং সম্পূর্ণ শান্তিতে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য এটি একটি উপযুক্ত জায়গা। বলে রাখা ভাল যে, সিমলা এবং মানালি আপনার গন্তব্য হলে থানাদার আপনার জায়গা নয়। কারণ, এখানে কয়েকটি বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে থাকা একটি ছোট্ট গ্রাম। কেবলমাত্র পর্যটকদের হৈচৈ, উন্মাদনা থেকে দূরে নিরিবিলিতে সময় কাটাতে চাইলে আপনি থানাদারে চলে যান। হিমালয়ের পাহাড়ের কোলে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের অনবদ্য মজাই পাবেন। চারপাশে আপেল বাগান-সহ ঘন জঙ্গলের শোভা স্বর্গের মতো মনে হবে। এখানকার শান্তি ও প্রশান্তি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। থানাদারের কাছাকাছি অল্প দূরত্বের মধ্যে দেখে নিন হাতু পিক, হাটু মন্দির, স্কি ঢালে, সুতলজ ভিউ পয়েন্ট, তানি জুব্বার লেক, জোড় বাগ, কাছারিতে মহামায়া মন্দির, আর্য সমাজ মন্দির, স্টোকস ফার্ম, থানাদার, সেন্ট মেরি চার্চ।ফটোগ্রাফি, গ্রাম জুড়ে হাঁটা, পাখি দেখা, ট্রেকিং, আপেল এবং এপ্রিকট তোলা (অবশ্যই বাগানের মালিকের অনুমতি নিয়ে ) এসব করেই আনন্দে দিন কেটে যাবে। উল্লেখ্য, থানাদার বেড়াতে যাওয়ার জন্য খুবই নিরাপদ জায়গা। এখানে পর্যটকদের ভিড় নেই। স্থানীয় গ্রামবাসীরা খুব সহজ এবং সরল মানুষ।
ইতিহাস
জানা গিয়েছে, থানাদার হলো ‘থান্ডি’ এবং ‘ধর’ এর সংমিশ্রণ, যার অনুবাদ ‘শীতল পাহাড়’। স্যামুয়েল স্টোকসের জীবন এবং গল্প এই জায়গার সাথে সম্পর্কিত। তিনি একজন আমেরিকান। ভারতে বসতি স্থাপন করেছিলেন তিনি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। পরে তিনি হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং তার নাম পরিবর্তন করে সত্যানন্দ স্টোকস রাখেন। তাঁর স্ত্রী অ্যাগনেস স্টোকসও ধর্মান্তরিত হয়ে নাম পরিবর্তন করে প্রিয়াদেবী স্টোকস রাখেন। ভারতের হিমাচল প্রদেশে আপেল চাষের প্রবর্তন করার জন্য তাঁকে আজ সবচেয়ে বেশি স্মরণ করা হয়। যদিও এই তথ্য কিছুটা ভুল বলেও মনে করেন অনেকেই। কারণ, এ অঞ্চলে আগে থেকেই আপেল চাষ হচ্ছিল। স্যামুয়েল শুধুমাত্র লুইসিয়ানার স্টার্ক ভাইদের দ্বারা উদ্ভাবিত আপেলের একটি নতুন স্ট্রেনকে সিমলা পাহাড়ের উপযোগী হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং তাঁর খামারে চাষ শুরু করেছিলেন।
কিভাবে যাবেন
হিমাচলের ছোট শহর নারকান্দার কাছেই থানাদার। এই শহর থেকে থানাদারের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার।দিল্লি থেকে এই থানাআর গ্রামের দূরত্ব ৪৪৫ কিলোমিটার এবং সিমলা থেকে ৮০ কিলোমিটার। পাহাড়ে অবস্থানের কারণে সড়কপথে সরাসরি থানাদারে যাওয়া যায়। আবার নিকটতম বিমানবন্দর বা রেলস্টেশনে পৌঁছে সেখান থেকে সড়কপথে থানাদারে পৌঁছানো যাবে। আপনি সিমলা থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে আপনি সহজেই থানাদারে পৌঁছাতে পারবেন। থানাদারের নিকটতম বিমানবন্দর হল জুব্বারহাট্টিতে অবস্থিত সিমলা বিমানবন্দর। তবে এটি একটি ছোট বিমানবন্দর এবং ফ্লাইট সীমিত। নিকটতম প্রধান বিমানবন্দর হলো চণ্ডীগড়। যে বিমানবন্দরের সঙ্গে সারা দেশের বিভিন্ন ফ্লাইট পরিষেবা সংযুক্ত। চণ্ডীগড় থেকে থানাদার মোট প্রায় ১৯০ কিলোমিটার।সেখান থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে থানাদার যাওয়া যাবে অথবা সিমলা বা নারকান্দার জন্য বাসেও যাওয়া যাবে। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন কালকা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে থানাদার। বিখ্যাত কালকা-সিমলা টয় ট্রেন এই রুটে প্রতিদিন চলে এবং ভাড়াও তেমন বেশি নয়। থাকার জন্য থানাদারে একাধিক হোটেল পাবেন।
কখন থানাদার যাবেন
আপনার উপর নির্ভর করবে কখন যাবেন। তুষার দেখতে চাইলে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাস সেরা সময়। চারপাশে সবুজ উপত্যকা দেখতে চাইলে বর্ষার সময় ভাল সময়। যদিও এপ্রিল, মে, জুন এবং সেপ্টেম্বর মাসকে থানাদার দেখার সেরা সময় হিসাবে বলা হয়। এ সময় সারাদিনের তাপমাত্রা মাঝারি থাকে এবং আবহাওয়া মনোরম থাকে। আবার ফটোগ্রাফির জন্য সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর সেরা সময়। থানাদারে থাকার জন্য একাধিক হোটেল পাবেন। আর খাওয়ার ক্ষেত্রে আপেল হলো থানাদারের মূল আকর্ষণ। স্থানীয়ভাবে তৈরি আপেল পণ্য যেমন ওয়াইন, জ্যাম, আচার, জুস এবং শুকনো আপেল কেনাকাটা করতে পারেন।