শান্তনু চ্যাটার্জি : বসন্তের মূল উৎসব দোলপূর্ণিমায় ঘুরে আসুন সতীমায়ের মেলায়। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা মেলা চলে। পছন্দের জিনিসপত্র কেনাকাটা করুন, আর আখড়ায় আখড়ায় ঘুরে বাউলগানে ভেসে যান।একঘেয়েমি থেকে মুক্তির জন্য এইসময়ে এর কোনও বিকল্প নেই।কলকাতা শহরের কাছে এত বড়ো মেলা আর পাওয়া যাবে না। কল্যাণী ঘোষপাড়ায় সতীমায়ের মন্দির ঘিরে এই মেলা বসে। মেলায় সতীমায়ের ভক্তদের বিপুল সমাগম ঘটে।সাধারণ ভক্তদের পাশাপাশি সতীমায়ের বাউল ভক্তরাও মেলায় আসেন। একাধিক আখড়া হয় বাউলদের।বাউল গান শুনতে ভালোলাগলে সারারাত গান শুনেও অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবেন। দোলপূর্ণিমার আগের দিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন কল্যাণী ঘোষপাড়ায় সতীমায়ের মন্দিরে। ওপার বাংলা থেকেও বহু মানুষ আসেন এই মেলায়। মন্দির সংলগ্ন পুকুরে স্নান করেন। তাঁরা এই পুকুরের জলকে পবিত্র বলে বিশ্বাস করেন। তাঁরা মনে করেন যে, পুকুরে পবিত্র স্নান করলে মন ও শরীর থেকে সমস্ত দুঃখ দূর হয়ে যাবে। এটা সতীমার জাদু শক্তি। এদিন রঙিন হয়ে ওঠে সতীমায়ের মন্দির ও মেলা প্রাঙ্গণ। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রচুর মানুষ এদিন সতীমায়ের মন্দির দর্শন করেন। তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
সতীমাকে নিয়ে একাধিক কাহিনী শোনা যায়। কিন্তু কোন কাহিনী সত্য তা বিচার করা কঠিন। একটি কাহিনীতে দাবি করা হয়েছে যে, আউলচাঁদ ফকিরের প্রধান শিষ্য রামশরণ পাল দোলপূর্ণিমার দিনে আউল-সম্প্রদায়ের অনুসারীদের সাক্ষাৎ করতে বলেন এবং সত্য ধর্মের অভিজ্ঞতাকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে বলেন। আউলচাঁদ ছিলেন (১৬৯৪-১৭৭০) একজন শক্তিশালী রহস্যবাদী ফকির। উলাবীরনগরের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। ঈশ্বরের সন্ধানে তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছেন। বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায়ের সংস্পর্শে এসেছেন। গুরুবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি। তাঁর দর্শন অনুযায়ী কর্তা মানে প্রভু। তিনি কর্তার ভজনার কথাই বলেন। তাই তাঁর অনুসারীদের বলা হয় কর্তাভজা। এই ধর্মে গুরুর উপাসনাকে নাকচ করা হয়।শুধুমাত্র ভগবানের (কর্তা) উপাসনা করতে বলা হয়। বহুসংখ্যক নিম্ন-শ্রেণীর মানুষকে আকৃষ্ট করে আউলচাদের এই দর্শন। আউলচাঁদের ২২ জন শিষ্য ছিল। বায়েস ফকির নামে পরিচিত ছিলেন তাঁরা। এদের মধ্যে প্রধান ছিলেন ঘোষপাড়ার তৎকালীন জমিদার রামশরণ পাল। রামশরণের স্ত্রী ছিলেন সরস্বতী। তিনি দীর্ঘদিনের সাধনার পর কর্তাভজাদের আরাধ্যা সতীমা হয়ে ওঠেন। জনশ্রুতি, বধির-মূক, অন্ধ এবং অন্য দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তরা তাঁর মহিমায় নতুন জীবন পেয়েছে।
অপর একটি মত অনুযায়ী কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করেন নদিয়ার ঘোষপাড়ার আউলচাঁদ। গোরাচাঁদ নামেও ভক্তদের কাছে পরিচিত ছিলেন তিনি। আউলচাঁদকে শ্রীচৈতন্যের অবতার হিসেবেই মানতেন ভক্তরা। ঘোষপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন রামশরণ পালও। সরস্বতী ছিল তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম। দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত ছিলেন সরস্বতী। মরাণাপন্ন সরস্বতীর সারা গায়ে পুকুর থেকে মাটি এনে লেপে দিয়েছিলেন আউলচাঁদ। আর এর ফলেই সুস্থ হয়ে ওঠেন সরস্বতী। পরে বাড়ির ডালিম গাছের নীচে দীর্ঘ সাধনার পর তিনিই হয়ে ওঠেন সতী মা। আউলচাঁদের কর্তাভজাদের প্রধান হয়ে ওঠেন তিনি। জনশ্রুতি, তিনি যে ডালিম গাছের নীচে বসে সাধনা করেন, সেই ডালিম গাছে ঢিল বাঁধলেই ভক্তদের ইচ্ছাপূরণ হয়। মন্দিরের কাছেই রয়েছে পুকুর। সেই পুকুরে স্নান করে ভক্তদের মন্দিরে পৌঁছে ডালিম গাছে ঢিল বেঁধে দিতে হয়। তাতেই পূরণ হয় মনস্কামনা। আর, মনস্কামনা পূরণ হলে এসে ডালিম গাছ থেকে ঢিল খুলে ফেলতে হয়। এটাই সতী মায়ের মন্দিরের নিয়ম।
অন্যদিকে, সতীমায়ের মন্দিরের বর্তমান ৩ পুরোহিতের একজন শম্ভুনাথ রায় জানান, কথিত আছে যে সতীমায়ের প্রকৃত নাম ছিল সরস্বতী দেবী।ভক্তরা তাঁকে সতীমা আখ্যা দিয়েছিলেন।তাঁর স্বামীর নাম ছিল রামশরণ পাল। সতীমার বাপের বাড়ি চাকদহের কাছে গোবিন্দপুরে। আর শ্বশুরবাড়ি চাকদহের জগদীশপুরে। দীর্ঘদিন ধরে সতীমা নিঃসন্তান ছিলেন।সতীমা তাঁর স্বামীকে জানালেন, তাঁর ইচ্ছে তিনি নির্জন স্থানে গিয়ে ঠাকুরের আরাধনা করতে চান।আজ থেকে পৌনে ৪০০ বছর আগে সতীমা ও তাঁর স্বামী কল্যাণী ঘোষপাড়ার এই স্থানে আসেন।তখন এখানে গভীর জঙ্গল। বাঘ ডাকছে।এখানে কুড়েঘর বেঁধে তাঁরা থাকতে শুরু করেন। আর সামনের ডালিম গাছের নীচে সাধনা শুরু করেন তাঁরা। কিছুদিন পর একজন ফকির এসে সতীমাকে জিজ্ঞেস করেন, মা কি চাও? সতীমা ও তাঁর স্বামী বলেন, আমরা তোমার মতো পুত্র চাই।ফকির একথা শুনে চলে যান। অন্যদিকে সতীমা ও তাঁর স্বামী সাধন-ভজন চালিয়ে যেতে থাকলেন।বহুবছর পর আবার ফকির এলেন।জিজ্ঞেস করলেন, মা তুমি কি চাও? সতীমা বললেন, আমি নিঃসন্তান। তোমার মতো পুত্র চাই। তখন ফকির কথা দিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর গর্ভে জন্ম নেবেন। আর সন্তানের নাম রাখতে হবে দুলালচাঁদ। অর্থাৎ এখানকার ইতিহাসে বলছে, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু আউলচাঁদ ফকিরের বেশ ধরে এখানে এসেছিলেন। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু এখানে যে নতুন ধর্ম প্রচার করেছিলেন তা আউলিয়া ধর্ম বা কর্তাভজা ধর্ম।আমরা জানি বৈষ্ণব ধর্মের ৪টি শাখা। আউল, বাউল, সাঁই ও দরবেশ।গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু পরবর্তীকালে সতীমায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর নাম রাখা হয়েছিল দুলালচাঁদ। পবিত্র দোলপূর্ণিমার দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুসতীমাকে দীক্ষা দিয়েছিলেন। সতীমা বাকসিদ্ধা হয়েছিলেন এই ডালিমতলায়। দোলপূর্ণিমার দিনে দুলালচাঁদ রূপে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আবির্ভাব উপলক্ষে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের লাখ লাখ মানুষ এখানে আসেন। ভক্তদের দাবি, হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিমদের একাংশও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সদস্য।
সতীমায়ের মন্দিরের অন্যতম পুরোহিত শম্ভুনাথ রায় আরও জানান, রামশরণ পালের জমিদারি ছিল না।এখানে বৈশাখ মাসে রথযাত্রা হয়। জনশ্রুতি, তখন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজত্ব। এই অঞ্চলও তাঁর রাজত্বে ছিল। পেয়াদারা কৃষ্ণচন্দ্রকে এই রথযাত্রার বিষয়ে জানালে তিনি বলেন, অসময়ে রথ চলতে দেওয়া যায় না। তিনি রথযাত্রা বন্ধের আদেশ দিলে সতীমা মানতে চাননি। তখন কৃষ্ণচন্দ্র বলেন, কোনও অলৌকিক ক্ষমতায় রথ নিজে নিজে চললে তিনি অনুমতি দেবেন। সেখানে সতীমা ছাড়াও ছিলেন দুলালচাঁদ। তিনি কমুণ্ডলের জল রথে ছিটিয়ে দিতেই রথ চলতে শুরু করে।এরপর কৃষ্ণচন্দ্র বেশ কিছু পরিমাণ জমি দান করেন।
জানা গিয়েছে, একসময় প্রায় ৬০০ বিঘা জমিতে সতীমায়ের মেলা বসত। বর্তমান ৩০ একর এলাকায় এই মেলা বসে। মেলা পরিচালনা করে কল্যাণী পুরসভা। প্রায় ৬০০টি স্টল বসে এই মেলায়। মূলত দোলপূর্ণিমার আগের দিন থেকে মেলা শুরু হয়ে যায়।বাউলদের আখড়াগুলোও এদিন থেকে জমতে শুরু করে। দোলের পরদিন পর্যন্ত আখড়াগুলো থাকে। মেলা চলে ১৫ দিন পর্যন্ত। মন্দির সংলগ্ন পুকুর পারে রাজ্যের তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তর লালন মঞ্চ তৈরি করেছে। সেখানেও তিনদিন ধরে চলে বাউলগানের আসর।সতীমায়ের মন্দিরে বা মেলায় যেতে হলে শিয়ালদহ-রানাঘাট শাখার কল্যাণী স্টেশনে আসতে হবে। ওখান থেকে অটোতে ঘোষপাড়া এবং এরপর টোটোতে বা হেটে মেলা প্রাঙ্গনে যাওয়া যাবে। অথবা, কল্যাণী সীমান্ত লোকাল ধরে কল্যাণী ঘোষপাড়া স্টেশনে নেমে টোটোতে বা পায়ে হেটে মেলা প্রাঙ্গণ। সড়কপথে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরেও খুব সহজেই কল্যাণী যাওয়া যায়।
Shantanu Chatterjee: Visit Satima’s fair on Dolpurnima, the main festival of spring. The fair runs 24 hours a day. Shop for your favorite items, and wander around the akhara to the bowlgan. There is no alternative to this time to get rid of boredom. You will not find such a big fair near the city of Kolkata. This fair is held around the temple of Satima in Kalyani Ghoshpara. A huge gathering of Satima’s devotees takes place in the fair. Apart from ordinary devotees, Baul devotees of Satima also come to the fair. There are multiple arenas for Baul. If you like to listen to Baul music, you can easily spend the whole night listening to Baul music. On the eve of Dolpurnima, many people from different parts of the state come to the temple of Satima at Kalyani Ghoshpara. Many people from across Bengal also come to this fair. Bathed in the pond adjacent to the temple. They believe that the water of this pond is holy. They believe that taking a holy bath in the pond will remove all sorrow from the mind and body. It is the magical power of Satima. Satima’s temple and fair grounds become colorful on this day. A large number of people regardless of religion, caste visit the temple of Satima on this day. He prayed for his blessings.
Many stories are heard about Satima. But it is difficult to judge which story is true. One story claims that Aulchand Fakir’s chief disciple, Ramsharan Pal, asked to meet the followers of the Aul sect on the day of Dolpurnima and ask them to practice the experience of true religion. Aul Chand (1694-1770) was a powerful mystical fakir. He was a resident of Ulabirnagar. In search of God, he wandered to different places. He came in contact with different religions. He was against Guruism. According to his philosophy Karta means Lord. He only talks about worshiping the Lord. Hence his followers are called Kartabhajas. Worship of Guru is rejected in this religion. Only God (Karta) is said to be worshipped. Aulchad’s philosophy attracted a large number of lower-class people. Aul Chand had 22 disciples. They were known as Bais Fakir. Chief among them was the then zamindar of Ghoshpara, Ramsharan Pal. Ramsharan’s wife was Saraswati. She became Aradhya Satima of Kartabhajad after a long period of sadhana. Janashruti, deaf-mute, blind and other incurableThose afflicted with disease have found new life in His glory.
According to another opinion, Aulchand of Ghoshpara of Nadia created the Kartabhaja community. He was also known as Gorachand to his fans. Devotees considered Aulchand as an avatar of Lord Chaitanya. Ramsharan Pal was also a resident of Ghoshpara. Saraswati was the name of his second wife. Saraswati was suffering from an incurable disease. Aulchand brought soil from the pond and coated Saraswati’s whole body. And as a result, Saraswati was cured. Later, after a long sadhana under the pomegranate tree of the house, she became Sati Maa. He became the head of Kartabhjad of Aulchand. According to legend, devotees’ wishes are fulfilled by tying a stone to the pomegranate tree under which he performs sadhana. There is a pond near the temple. After bathing in that pond, the devotees have to reach the temple and tie a rock to the pomegranate tree. It fulfills the desire. And, when the wish is fulfilled, the stone must be removed from the pomegranate tree. This is the rule of Sati Maa temple.
On the other hand, Shambhunath Roy, one of the present 3 priests of Satima’s temple, said that it is said that Satima’s real name was Saraswati Devi. Devotees called her Satima. Her husband’s name was Ramsharan Pal. Satima’s father’s house is in Govindpur near Chakdah. And in-laws in Chakdah Jagdishpur. Satima was childless for a long time. Satima told her husband that she wanted to go to a secluded place to worship Tagore. 400 years ago, Satima and her husband came to this place in Kalyani Ghoshpara. At that time, it was a deep forest. The tiger is calling. They built a hut here and started living. And they started Sadhana under the front pomegranate tree. After a few days, a Fakir came and asked Satima, what do you want? Satima and her husband say, we want a son like you. Fakir hears this and leaves. On the other hand, Satima and her husband continued to perform Sadhana-Bhajan. After many years, Fakir came again. He asked, what do you want, mother? Satima said, I am childless. I want a son like you. Fakir then promised that he would be born in her womb. And the child should be named Dulalchand. In other words, the history of this place says that Gauranga Mahaprabhu came here in the guise of Aul Chand Fakir. Gauranga Mahaprabhu preaches the new religion hereIt was done by Auliya Dharma or Kartabhaja Dharma. We know the 4 branches of Vaishnavism. Aul, Baul, Sai and Darvesh. Gauranga Mahaprabhu was subsequently born to Satima. His name was Dulalchand. He was born on the holy day of Dolapurnima. Gauranga initiated Mahaprabhusthima. Satima became eloquent in this Dalimatla. Lakhs of people from the Kartabhaja community come here on the occasion of the appearance of Lord Gauranga Mahaprabhu in the form of Dulalchand on the day of Dolapurnima. Devotees claim that apart from Hindus, a section of Muslims are also members of the Kartabhaja sect.
Shambhunath Roy, one of the priests of Satimayer’s temple, also said that Ramsaran Pal did not have zamindari. Rath Yatra is held here in the month of Baisakh. According to legend, then the reign of King Krishnachandra. This region was also under his rule. When the footmen told Krishnachandra about this chariot journey, he said, “The chariot cannot be allowed to move at an untimely time.” Satima did not want to obey when he ordered to stop the Rath Yatra. Then Krishnachandra said, if the chariot moves by itself by some miraculous power, he will allow it. Apart from Satima, Dulalchand was there. As soon as he sprinkled the Kamundal water on the chariot, the chariot began to move. After that, Krishnachandra donated a large amount of land.
It is known that Satima’s fair used to be held on about 600 bigha of land. This fair is held in the present 30 acre area. Kalyani municipality conducts the fair. There are about 600 stalls in this fair. Basically the fair starts from the day before Dolpurnima. The akharas remain till the day after Dol. The fair lasts for 15 days. The pond adjacent to the temple has been set up by the State Information and Culture Department. The festival of Baulgan continues there for three days. If you want to go to Satimay’s temple or fair, you have to come to Kalyani station of Sealdah-Ranaghat branch. From there you can go to Ghoshpara by auto and then toto or walk to the fair grounds. Or, take the Kalyani border local and get down at Kalyani Ghoshpara station by toto or walk to the fair grounds. Kalyani can be easily reached by road through National Highway No. 34.
#bangla#chaitanya#sati#maa#mela#kalyani#nadia#india#baul#aul#kartabhaja#dol#holi#purnima#G20#hindu#baishnab#baul #ba #l #decoracion #as #navidad #a #dise #n #salsa #salseros #cactus #lidiaboutique #ventadetodounpoco #forever #fotografia #sonrie #armario #madera #feliz #santiniketan #mujer #fahsion #moda #temporada #muebles #ropero #ni #amigas #gan#gana
