Saturday, April 26, 2025
Tour & Travel News(Flavour Of Bengal)spot_img
HomeTravelছুটির দিনে জেলা সফরে চলুন, ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু পর্যটকরা ঘুরে আসুন বর্ধমান থেকে

ছুটির দিনে জেলা সফরে চলুন, ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু পর্যটকরা ঘুরে আসুন বর্ধমান থেকে

Spread the love

 ওয়েব ডেস্ক : মোঘল আমল হোক বা ইংরেজ শাসন, বাংলার ইতিহাসে বর্ধমানের গুরুত্ব কিছুমাত্র কম নয়। অনুসন্ধিৎসু পর্যটকরা তাই প্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করতে ঘুরে আসুন বর্ধমান থেকে। একাধিক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে বাংলার ধানের গোলা বর্ধমানে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকেই পাওয়া যায় বর্ধমান শহরের অস্তিত্ব। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান-সহ বহু ধর্মের মানুষই এখানে রাজত্ব করেছেন। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ভিন্ন সংস্কৃতির নিদর্শন এখনও রয়েছে বর্ধমানে। কি দেখবেন, দেখে নিন।
কার্জন গেট
কার্জন গেটকে বর্ধমান শহরের প্রবেশদ্বার বলা হয়। গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড দিয়ে এই গেট পেরিয়েই বর্ধমানে ঢুকতে হয়। জানা যায় যে, ১৯০৩ সালে রাজা বিজয় চাঁদ মহাতাবের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে এই গেটটি নির্মাণ করে বর্ধমানের রাজপরিবার। জিটি রোড এবং বিসি রোডের সংযোগস্থলে রয়েছে এই বিশাল তোরণ। ১৯০৪ সালে তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জনের সফরের সময় তোরণটির নামকরণ হয় কার্জন গেট। স্বাধীনতার পরে এই গেটের নামকরণ করা হয় বিজয় তোরণ। দাবি করা হয় যে, মুম্বইয়ের গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ার অনুকরণে এই তোরণ তৈরির জন্য ইটালি থেকে স্থপতিদের আনা হয়েছিল।
পীর বাহারামের মাজার
বর্ধমানে রয়েছে তুর্কি বংশোদ্ভুত কবি এবং ফকির বাহারামের মাজার। তিনি মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সময় ভারতে আসেন। আগ্রা থেকে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত ভ্রমণ করেন। শেষ বয়সে পীর বাহারাম বর্ধমানে বাস করতেন। তিনি তৃষ্ণার্তদের জল দান করে পূণ্য অর্জন করতেন। এলাকায় তিনি বাহারাম সাক্কা নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর বর্ধমানেই কবর দেওয়া হয় তাঁকে। তাঁর সমাধিস্থল পীর বাহারামের মাজার নামে পরিচিত। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এখন এই মাজার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে । বর্ধমান রাজবাড়ির কাছেই রয়েছে এই মাজার।
শের আফগানের সমাধি
পীর বাহারামের মাজারের ঠিক পূর্ব দিকে রয়েছে শের আফগানের সমাধি। এখন যেখানে বর্ধমান রেলওয়ে স্টেশন, তার কাছে ১৬১০ সালে এক যুদ্ধে প্রাণ হারান শের আফগান খান এবং কুতুবউদ্দিন খান। মুঘল সম্রাট আকবর এবং জাহাঙ্গীরের আমলে শের আফগান ছিলেন বর্ধমানের জায়গীরদার। তাছাড়া সম্রাট জাহাঙ্গিরের স্ত্রী নূর জাহানের প্রথম স্বামী ছিলেন তিনি। বলা হয়, শের আফগানের স্ত্রী সপ্তদশী নূর-জাহানের প্রেমে পড়েছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর। আফগান ওই সময় সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। তাঁকে হত্যার জন্যই কুতুবউদ্দিন খানকে বর্ধমানে পাঠান জাহাঙ্গীর। যুদ্ধে প্রাণ হারান উভয়েই। এই দুজনের সমাধি নির্মাণ করেন বর্ধমানের রাজা।
সর্বমঙ্গলা মন্দির
১৭০২ সালে মহারাজা কীর্তিচাঁদ নির্মাণ করেছিলেন বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির। এইমন্দির রয়েছে বর্ধমানের ডিএন সরকার রোডে। দেবী সর্বমঙ্গলার মূর্তিটি প্রায় ১০০০ বছর পুরনো। এই মন্দির অবিভক্ত বাংলার প্রথম নবরত্ন মন্দির।
কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দির
বর্ধমান শহরের কাঞ্চন নগরে রয়েছে কঙ্কালেশ্বরী মন্দির। বলা হয়, ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে দামোদর নদের পাশে এই মন্দিরের কালী মূর্তিটি পাওয়া যায়। এই মন্দিরে রয়েছে নয়টি শৃঙ্গ। ফলে এই মন্দিরের অপর নাম নবরত্ন মন্দির। এই মন্দিরটি পূর্ব বর্ধমানের দ্বিতীয় নবরত্ন মন্দির।
১০৮ শিব মন্দির (নবাবহাট)
সিউড়ি রোডে নবাবহাট বাস টার্মিনাসের কাছে রয়েছে বর্ধমানের বিখ্যাত ১০৮ শিব মন্দির। ১৭৮৮ সালে এই মন্দির নির্মাণ করেন মহারাজা তিলকচন্দ্রের স্ত্রী মহারানি বিষ্ণান কুমারী। বাংলার শিল্পকর্মের এক অনন্য নজির এই আটচালার মন্দির। এই মন্দির কাছেই রয়েছে দুটি বিশাল পুকুর। একটি আয়তক্ষেত্রাকার মালার আকারে সাজানো রয়েছে ১০৮টি মন্দির।
খাজা আনোয়ার বেড় (নবাব বাড়ি)
বর্ধমানের দক্ষিণ দিকে রয়েছে খাজা আনোয়ার বেড় নবাব বাড়ি ও প্রায় তিনশো বছরের পুরানো সমাধিক্ষেত্র। চারদিক উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা এই ভবনের স্থাপত্যশৈলী ইন্দো-সিরিয়ান স্থাপত্যের নিখুঁত মিশ্রণ। এই ভবনের ভিতরে একটি উইন্ড হল বা হাওয়া ঘরের মাঝখানে একটি গভীর পুকুর রয়েছে।
গোলাপবাগ (বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস)
বর্ধমানের গোলাপবাগ বা গোলাপের বাগান একটি প্রিয় পর্যটন স্থান। ১৮৮৩ সালে রাজা বিজয় চাঁদ মাহাতাব প্রতিষ্ঠিত বোটানিকাল এবং প্রাণিবিদ্যা সম্পর্কিত উদ্যান এই গোলাপের বাগান। বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী ডালটন হুকার এখানে এসে ১২৮ ধরনের গাছ তালিকাভুক্ত করেছিলেন। এখন এই বাগানটি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লেক্সের অন্তর্গত।
ভাল্কি মাচান
নির্জন নিরিবিলিতে কিছুটা সময় কাটাতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ভাল্কি মাচান। ভাল্কি গ্রাম থেকে ২ কিলোমিটার দূরে প্রতাপপুর বন সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত এই ভাল্কি মাচান। এখানে প্রাচীন প্রহরী দুর্গের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। দাবি করা হয় যে, অতীতে এই জায়গাটি বর্ধমানের রাজাদের ভালুক শিকারের প্রিয় জায়গা ছিল। এখন পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও বর্ধমান জেলায় একাধিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে অট্টহাস সতিপীঠ মন্দির, পূর্বস্থলী অক্স-বো হ্রদ, চুপি চর, কালনা রাজবাড়ি মন্দির, লাল ইঁটের গির্জা, রমনাবাগান – প্রাণিবিদ্যা পার্ক, কৃষক সেতু এবং দামোদর নদ, বর্ধমান টাউন হল, কৃষ্ণসায়র ইকোলজিকাল উদ্যান, ঝুলন্ত রেলওয়ে ওভার ব্রিজ ইত্যাদি রয়েছে।

Santanu Chatterjee
Santanu Chatterjeehttps://flavourofbengal.com
Santanu Chatterjee is a Tax & Financial Consultant and Food Safety Mitra by profession.But he is an amateur wildlife and bird photographer,He also loves to travel, so model photography and travel photography are very important to him.,He is also a Journalist, Tour Facilitator (Indian Tourism Government of India), Tourist Guide (West Bengal Government).
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Translate »