ওয়েব ডেস্ক : ওড়িশা মানে পুরী, কোনার্ক বা চিল্কা নয়, এছাড়াও অনেক চমৎকার জায়গা আছে, যার খবর আমরা অনেকেই জানিনা। সেরকম একটি জায়গা হলো সুন্দরগড় জেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সুন্দরগড় জেলার বৃহত্তম শহর ইস্পাত নগরী রৌরকেলা। রৌরকেলা ও এই শহরের আশপাশে অসাধারণ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এইসব অঞ্চলে পর্যটকদের আনাগোনা একদমই কম। যার ফলে প্রকৃতির কোলে নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে ৩ থেকে ৪ দিন কাটানোর পক্ষে আদর্শ গন্তব্য হতে পারে রৌরকেলা। এই শহর সুন্দরগড় জেলার মধ্যে একটি বৃহত্তম ও পরিকল্পিত শহর। ওড়িশা রাজ্যের তৃতীয় বৃহত্তম শহরও এটি। এর পরিচিতির কারণ স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সেইল)-এর দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা এখানে রয়েছে। তাই রৌরকেলাকে ইস্পাত নগরী বলা হয়। এছাড়াও এই শহর আরও একটি কারণে বিখ্যাত। পৃথিবীর বৃহত্তম হকি স্টেডিয়াম ‘বিরসা মুন্ডা স্টেডিয়াম’ রয়েছে এই শহরেই।
দর্শনীয় স্থান
হনুমান বাটিকা, বৈষ্ণদেবী মন্দির, ব্যাস মন্দির, মন্দিরা ড্যাম, পিতামহল ড্যাম, কাঁসবহল ড্যাম, খন্ডধর জলপ্রপাত, বাদলগিরি ওয়াটারফল, গুদগুদা ওয়াটারফল, দারজিং, কুটরার মিনি কাশ্মীর, কানাকুন্ড, সারাফগড় জলপ্রপাত, ছেঙ্গা পাহাড়ের ন্যাচারাল আর্ক। এছাড়াও চলে যেতে পারেন সম্বলপুরে। দেখে নিতে পারেন হীরাকুদ ড্যাম, সমলেশ্বরী মন্দির, মা ঘন্টেশ্বরী মন্দির ও ভিউ পয়েন্ট।
পর্যটনের উপযুক্ত সময়
বর্ষাকাল এবং শীতকাল। আগস্ট মাস থেকে একদম ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বর্ষার সময়ে গরম অত্যধিক থাকে। এই সময় অনেকেই এই অঞ্চল এড়িয়ে চলেন। যদিও বর্ষার সময় এই এলাকাগুলোর আসল রূপ দেখা যায়। পুরো এলাকা সবুজে সতেজ হয়ে ওঠে এবং নদী ও ঝর্নাগুলো প্রাণ ফিরে পায়। শীতকালে এর অন্য রূপ দেখা যায়।
কিভাবে ঘুরবেন
সুন্দরগড় জেলার সদর শহর রৌরকেলা থেকে বেড়ানোর পরিকল্পনা করতে পারেন, আবার ঝারসুগরা থেকেও বেড়ানো শুরু করতে পারেন। যদিও রৌরকেলা থেকে শুরু করাই ভালো হবে।
সকাল থেকেই পর্যটন শুরু করুন। সকালে পৌঁছে যান রৌরকেলা স্টেশন। ওখান থেকে অটো করে সোজা চলে যান হোটেলে। বিশ্রাম নিন কিছুটা সময়। এরপর বেরিয়ে পড়ুন ঘুরতে। রৌরকেলা শহরের প্রধান মন্দিরের মধ্যে একটি মন্দির ‘হনুমান বাটিকা’ দর্শন করুন। বিশাল পরিসর নিয়ে গঠিত এই মন্দির কমপ্লেক্স। প্রায় ১৩ একর জায়গা জুড়ে থাকা এই মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ ৭৪ ফিট উচু হনুমানের মূর্তি। এছাড়াও এখানে দেশের একাধিক উল্লেখযোগ্য মন্দিরের অনুরূপ মন্দির দেখতে পারবেন। এরপর দেখে নিন রৌরকেলার আরও একই প্রসিদ্ধ মন্দির ‘মা বৈষ্ণদেবী মন্দির’। এই মন্দির দর্শনের পর চলে আসুন ব্রাহ্মণী নদীর ওপর পারে ‘বেদব্যাস মন্দির’-এ। বলা হয় এই মন্দিরে বসেই নাকি বেদব্যাস মহাভারত রচনা করেছিলেন। এরপর চলে যেতে পারেন শহর থেকে বাইরের দিকে। রৌরকেলার আশেপাশে তিনটে ড্যাম আছে। পিতামহল ড্যাম, কাঁসবহল ড্যাম এবং মন্দিরা ড্যাম। এই মন্দিরা ড্যামটি তিনটি ড্যামের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং এটি ব্রাহ্মণী নদীর ওপরে তৈরি করা হয়েছে। চারিদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই ড্যামগুলো দেখতে বেশ ভালোই লাগবে।
দ্বিতীয় দিনে অবশ্যই দেখে নেবেন খন্ডধর ওয়াটারফলস। রৌরকেলা থেকে খন্ডধর ফলস-এর দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগবে ২ ঘণ্টারও বেশি। যাতায়াতের পথে বাদলগিরি ওয়াটারফলস্ এবং দারজিং দেখে নিতে পারেন। খন্ডধর নেচার ক্যাম্পের ভেতরে থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত রয়েছে। বেশ কিছু সুন্দর কটেজও রয়েছে। খন্ডধর নেচার ক্যাম্পে থাকতে না চাইলে টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকতে হবে। কয়েকশো সিঁড়ি পেরিয়ে ফলসের একদম কাছে যেতে পারবেন। এটি ওড়িশার দ্বিতীয় উচ্চতম ওয়াটারফলস। প্রায় ৮০০ ফিট। সম্ভব হলে নেচার ক্যাম্পের কটেজ বুক করে সেখানে থাকুন।ব্যালকনি থেকেই এই ওয়াটারফলসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তবে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে বর্ষার সময় দেখতে হবে। অন্য সময়ে এই ওয়াটারফলস-এর প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায় না। তাই শীতকালে খন্ডধর ওয়াটারফলস দেখতে না আসাই ভালো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওড়িশায় খন্ডধর ওয়াটারফলস্ দুটি আছে। একটি এই সুন্দরগড়ের দিকে এবং দ্বিতীয়টি কেওনঝাড়ের দিকে।
পরের দিন রৌরকেলার দক্ষিণে থাকা দর্শনীয় স্থানগুলি দেখে নিন। রৌরকেলা থেকে পৌনে দু’ঘণ্টার দূরত্বে রয়েছে বাদলগিরি ওয়াটারফলস। আশেপাশের পরিবেশ অসাধারণ সুন্দর। এরপর দেখে নিন গুদগুদা ওয়াটারফলস। এই ফলসটি দেখে সোজা যান দারজিং এ। ব্রাহ্মণী নদীর ধারে খুব সুন্দর একটি পিকনিক স্পট দারজিং। ভালো লাগবে।
শেষদিনে দেখে নিন কুটরার ডোগলাই পাহাড়। এই পাহাড় মিনি কাশ্মীর নামে পরিচিত। এটি দেখে বেরিয়ে পড়ুন সুন্দরগড় যাওয়ার রাস্তায়। সুন্দরগড় শহরে না ঢুকে চলে যান বালিশঙ্করা দিকে। বালিশঙ্করা হয়ে পৌঁছে যান কানাকুন্দে। এই জায়গাটি হলো ইব নদীর একটি ভ্যালি। এমন অদ্ভুত ভ্যালি হয়তো এই দেশে আর কোথাও দেখতে পাবেন না। এই অঞ্চলকে বলা হয় ‘ওড়িশার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’। ইব হলো মহানদীর একটি উপনদী। উল্লেখ্য, ইব নামে একটি স্টেশনও রয়েছে ঝারসুগরার পরে। এরপর চলে যান সারাফগড় ড্যাম। এখানে আসতে প্রায় ঘণ্টাদেড়েক লাগবে। সারাফগড় ড্যামের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করে চলে যান ছেঙ্গা পাহাড়ের ন্যাচারাল আর্ক দেখতে। আর বিকেলের মধ্যে চলে আসুন ঝারসুগরায়। এখান থেকে ঘরে ফিরতে পারেন। অথবা আরও একটি দিন সময় থাকলে চলে যান সম্বলপুরে। খুব একটা বেশি দূরে নয়, ঝারসুগরা থেকে ট্রেন পেয়ে যাবেন সম্বলপুরের বা গাড়িতেও যেতে পারেন। সম্বলপুরে রয়েছে ভারতের দীর্ঘতম হীরাকুদ বাঁধ। এছাড়াও আছে আরও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।