ওয়েব ডেস্ক : ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু মানুষের পক্ষে ছুটির দিনে ঘুরে দেখার পক্ষে এক আদর্শ জায়গা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চন্দ্রকেতুগড়। প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন চন্দ্রকেতুগড় বাংলার হরপ্পা নামে পরিচিত। চন্দ্রকেতুগড়ে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখার সুযোগ রয়েছে। ইতিহাসপ্রেমীদের অনুমান, এই স্থানটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের।
পোড়ামাটির ছবি, মোটিফ, সিল এবং আরও অনেক কিছু দেখতে আপনাকে অবশ্যই চন্দ্রকেতুগড়ের সংগ্রহশালায় যেতে হবে। একসময় এটি আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূরে বেড়াচাপা ও হাড়োয়া রোড রেলস্টেশনের কাছে চন্দ্রকেতুগড়। কলকাতা থেকে যশোর রোড ধরে বারাসত হয়ে টাকি রোডে যেতে হয় দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা মোড়। সেখান থেকে বাঁ দিকে চলে গিয়েছে পৃথীবা রোড। সেই রাস্তার পাশেই খনা-মিহিরের ঢিপি। বেড়াচাঁপা মোড় থেকে ডান দিকে হাড়োয়া রোড ধরে কিছুটা গেলেই চন্দ্রকেতুগড়। দেখা মিলবে, বিশাল উঁচু মাটির তলায় চাপা পড়ে থাকা এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। প্রাক-মৌর্য যুগে খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩য় শতাব্দীর ইতিহাস এই স্থানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ঐতিহাসিকরা এই স্থানটিকে প্রাচীন গঙ্গারিডি সভ্যতার নিদর্শন বলে মনে করেন। গ্রীক পরিব্রাজক মেগাস্থেনিস তাঁর ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থে এর উল্লেখ করেছেন।
এখন চন্দ্রকেতুগড়ে একটি জাদুঘর আছে। এই জাদুঘরে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের একটি অংশ রয়েছে। এই নিদর্শন একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক প্রয়াত দিলীপকুমার মৈতে সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু ছিলেন। এই স্থান থেকে মোট ৫২৪টি পুরাকীর্তি সংগ্রহ করেছিলেন দিলীপ কুমার মৈতে। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দীপন মৈতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে পুরাকীর্তিগুলি হস্তান্তর করেন। প্রসঙ্গত, আশুতোষ মিউজিয়াম অফ ইন্ডিয়ান আর্ট ১৯৫৭ এবং ১৯৬৮ সালের মধ্যে এই স্থানে খননকার্য পরিচালনা করেছিল এবং বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক সময়ের ধ্বংসাবশেষ প্রকাশ করেছিল। যদিও ওইসব ধ্বংসাবশেষের কালানুক্রমিক শ্রেণিবিন্যাস অসম্পূর্ণ থেকে যায়। চন্দ্রকেতুগড়ের অনেক আইটেম এবং পোড়ামাটি এখন ভারতে এবং বিদেশের বিভিন্ন যাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে এবং এইসব নিদর্শনে ব্যক্তিগত সংগ্রহের একটি অংশ বলে জানা গিয়েছে।
ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে, চন্দ্রকেতুগড় স্থান এবং আশেপাশের এলাকাটি প্রাচীন গ্রীক ও রোমান লেখকদের কাছে গঙ্গারিডি নামে পরিচিত।
চন্দ্রকেতুগড় ছাড়াও এই এলাকা সংলগ্ন ধান্যকুড়িয়া রাজবাড়িও দেখে নিতে পারেন। গ্রামের মধ্যে ইন্দো-ইউরোপীয় গঠনশৈলীর একাধিক প্রাসাদ ও দুর্গাদালান আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সেই সঙ্গে আর একটু এগিয়ে চলে যেতে পারেন টাকি শহরে। একাধিক হোটেল ও গেস্টহাউজ পাবেন এখানে। সবুজ পরিবেশে ইছামতী নদীতে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এছাড়াও এখানে বেশ কয়েকটি প্রাচীন ভবন এবং মন্দির রয়েছে। রয়েছে গোলপাতার জঙ্গল।