কামাখ্যা মন্দির (ছবি ১ )
ওয়েব ডেস্ক : আগামীকাল ২২ জুন শনিবার থেকে অসমের গুয়াহাটির কামাখ্যা মন্দিরে হবে অম্বুবাচী মেলা। এই মেলা কামাখ্যা মন্দিরের প্রধান একটি বার্ষিক উৎসব। এই উৎসবকে উর্বরতা ও নারীত্বের প্রতীক বলা হয়। অম্বুবাচী মেলা হলো দেবী কামাখ্যার ঋতুস্রাব উদযাপন।জানা গিয়েছে, প্রতিবছর অম্বুবাচী উৎসব চলাকালীন কামাখ্যা দেবী্র ঋতুস্রাবের কারণে মন্দির বন্ধ থাকে। এইসময়ে মন্দিরে ভক্তদের প্রবেশও নিষিদ্ধ থাকে।এবছর ২২ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত মন্দির বন্ধ থাকবে। ২৫ জুন রাত ৯টা ০৮ মিনিটে মন্দিরের গেটগুলি ফের খোলা হবে বলে জানা গিয়েছে। মন্দির বন্ধ থাকলেও বাইরে অগণিত ভক্তের সমাগম হয়। তিনদিন ধরে চলে নানারকম আচার অনুষ্ঠান।
কামাখ্যা মন্দির (ছবি 2 )
হিন্দুধর্মের অন্যতম একটি বাৎসরিক উৎসব অম্বুবাচী। জনশ্রুতি, আষাঢ় মাসের ৭ তারিখে মৃগ শিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে পৃথিবী বা ধরিত্রী মা ঋতুময়ী হয়। এই সময়ে অম্বুবাচী পালন করা হয়। বাংলায় প্রবাদ আছে, ‘কিসের বার কিসের তিথি, আষাঢ়ের সাত তারিখ অম্বুবাচী।’ অম্বুবাচী শুরু হয় এদিন থেকেই। জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে, সূর্য যে বারের যে সময়ে মিথুন রাশিতে গমন করেন, তার পরবর্তী সেই বারের সেই কালে অম্বুবাচী হয়। অর্থাৎ, এই সময়ে ঋতুমতী হয় পৃথিবী। অম্বুবাচীর তিন দিন পর্যন্ত কোনও ধরনের মাঙ্গলিক কাজ করা যায় না। ‘অম্বুবাচী’ মানে জলের সাথে কথা বলা এবং এটিও বোঝায় যে, এই মাসে প্রত্যাশিত বৃষ্টি পৃথিবীকে উর্বর করে তোলে এবং প্রজননের জন্য প্রস্তুত। এই সময়ের মধ্যে দৈনিক পুজো স্থগিত করা হয়। সমস্ত কৃষি কাজ যেমন খনন, লাঙ্গল, বীজ বপন এবং ফসল রোপণ করা নিষিদ্ধ থাকে। বিধবা, ব্রহ্মচারী এবং ব্রাহ্মণরা এই দিনগুলিতে রান্না করা খাবার এড়িয়ে চলে। চতুর্থ দিনে অম্বুবাচী সমাপ্ত হয়, গৃহস্থালির জিনিসপত্র, বাসনপত্র এবং জামাকাপড় ধোয়া, পরিষ্কার এবং পবিত্র জল ছিটিয়ে বিশুদ্ধ করা হয়, কামাখ্যা দেবীর পুজো শুরু হয় এবং অন্যান্য আচারগুলি সম্পাদন করা হয়। এর পরে মন্দিরে প্রবেশ শুভ বলে মনে করা হয়।

প্রসঙ্গত, ৭ থেকে ১১ আষাঢ় চার দিন গ্রামবাংলার মহিলারা এই অনুষ্ঠান পালন করেন। বন্ধ থাকে চাষবাসের কাজ। অম্বুবাচী উপলক্ষে পিঠে পায়েস তৈরির রীতি আছে। অম্বুবাচীর তিনদিন ব্রত রাখেন বিধবা মহিলারা। এর আগের দিন রান্না করে রেখে দিয়ে সেই খাবার তিন দিন ধরে খান তাঁরা।ওই তিনদিন তাঁরা কোনও গরম খাবার খান না। অম্বুবাচী উৎসব উপলক্ষে অসমের গুয়াহাটির কামাখ্যা শক্তিপীঠ ঘিরে তিনদিন ধরে বিরাট মেলা হয়। মন্দির বন্ধ থাকলেও পরিবারের মঙ্গল কামনায় ভক্তরা নানারকম আচার অনুষ্ঠান পালন করে।এইসময়ে লাখ লাখ মানুষ আসেন কামাখ্যায়। পাশাপাশি আসেন তান্ত্রিকরাও। উল্লেখ্য, অম্বুবাচী শুরুর আগে কামাখ্যা মন্দিরের গর্ভগৃহে সাদা রঙের কাপড় রেখে দেওয়া হয়। তিন দিন বাদে সেই কাপড় লাল হয়ে যায়। সেটিই ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়। ওড়িশায় অম্বুবাচী উৎসবকে ‘রজ উৎসব’ বলা হয়।