ওয়েব ডেক্স : দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে চলুন মুকুটমণিপুর।মুকুটমনিপুরের মূল আকর্ষণ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাটির বাঁধ কংসাবতী ড্যাম। এই ড্যাম রহস্যময় টিলা দিয়ে ঘেরা আর মুকুট আকৃতির। দুটি নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত এই ড্যামটি সবুজ মোড়া নেকলেস আকৃতির রাঙ্গামাটি বাঁধের জন্যও বিখ্যাত। নির্মল প্রকৃতি, বিস্তৃত জলরাশি, সবুজ বন এবং টিলা দিয়ে ঘেরা মুকুটমণিপুর বাঁধকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। শহুরে কোলাহল থেকে অনেক দূরে মুকুটমণিপুরের সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ আর উপজাতীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া পর্যটকদের অনাবিল আনন্দ দেয়। ফটোগ্রাফির জন্য একটি স্বপ্নের গন্তব্য মুকুটমনিপুর। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে,একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একটি আদর্শ জায়গা হলো বাঁকুড়ার রাণী মুকুটমনিপুর। ফটোগ্রাগ্রফারদের জন্য একটি স্বপ্নের জায়গাও বলা যায়।
কি দেখবেন :-
ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাটির বাঁধ কংসাবতী তার বিস্তীর্ণ জলরাশি নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। এই বাঁধের দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার। ১৯৫৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের সময়ে বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মুকুটমনিপুরে জল সংরক্ষণাগারের পরিকল্পনা করা হয়। এরফলে নির্মিত হয় ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৃত্তিকা নির্মিত জলাধার বাঁধ মুকুটমনিপুর। এই বাঁধ ৮০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার সেচ সমস্যার সমাধান করে। পাহাড়ে ঘেরা এই বাঁধের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে যেকোনও পর্যটককেই। জলের ওপর সূর্যের সোনালী রশ্মি, জলের ওপর আগুনরঙা লাল আভা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সূর্যাস্তের ঐশ্বরিক সৌন্দর্য অনুভব করার সুযোগ মিলে যাবে।
এখানে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে চাঁদ ওঠার দৃশ্য দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। এর জন্য রয়েছে মুসাফিরানা ভিউ পয়েন্ট। এই ভিউ পয়েন্ট থেকে মনোমুগ্ধকর চন্দ্রোদয়ের সাক্ষী থাকার সুযোগ রয়েছে। সবুজ পরিবেশ আর মনোমুগ্ধকর জলরাশির সামনে মাশরুম আকৃতির ছায়ার নীচে বসে অনন্ত সময় কাটালেও ক্লান্তি গ্রাস করবে না। দিনে ও রাতে জলের মধ্যে সূর্য আর চাঁদের আলোর প্রতিফলনের অপরূপ শোভায় বিভোর হয়ে যাবেন।
কাছেই রয়েছে পরেশনাথ শিব মন্দির। একটি পবিত্র স্থান। বাঁধ নির্মাণের সময় মাটি খোড়া হলে তখন এই মূর্তিটি পাওয়া যায়। এটিকে জৈন সংস্কৃতির প্রমাণ বলে মনে করা হয়। বহু মানুষ এখানে ‘মহা শিবরাত্রি’ উৎসব পালন করতে আসেন। এই মন্দির থেকেও সূর্যাস্তের সেরা দৃশ্যের সাক্ষী হতে পারবেন। অস্তগামী সূর্য ধীরে ধীরে দিগন্তের নিচে ডুবতে থাকার সময়ে জ্বলন্ত বলটি যখন অর্ধেক জলে ডুবে যেতে থাকে, তখন বাঁধের জলে এর অপূর্ব প্রতিফলন ঘটে। একটি মনোরম দৃশ্যের জন্ম হয়।
মুকুটমনিপুর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে আছে বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্ক বা বনপুকুরিয়া হরিণ উদ্যান। নৌকা ভাড়া করে যাবার পর হেঁটে বা রিক্সা করে পৌছে যান ডিয়ার পার্কে। পরিবারকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার জন্য এক আদর্শ জায়গা বনপুকুরিয়া হরিণ পার্ক। এখানে হরিণ অবশ্যই অবাক চোখে আপনাকে স্বাগত জানাতে আসবে।
এছাড়াও বারোঘুটু পাহাড়ের ওপরে উঠলে দেখা যাবে কংসাবতী ও কুমারী নদীর সংযোগস্থল। এর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে ভুল করবেন না।বারোঘুটুর পরে কাছাকাছি নোয়াডিহি যেতে পারেন। এখান থেকেও সূর্যাস্তের সাক্ষী থাকা আপনার জীবনে এক বিরল অভিজ্ঞতার সুযোগ দেবে। এছাড়াও দেখতে পারেন সুন্দর এক পাহাড়ি অঞ্চল সোনাঝুরি নেচার পার্ক।
মুকুটমনিপুর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে জৈন ইতিহাস সমৃদ্ধ ছোট্ট গ্রাম অম্বিকানগর। জৈন তীর্থযাত্রীদের পীঠস্থান ছিল এই গ্রাম। এখনও প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। আছে ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ি আর অম্বিকার মন্দির। সন্ধ্যায় এই মন্দিরে আরতি দেখতে পারেন। গত ৭০০ বছর ধরে দেবী দুর্গাকে মা অম্বিকা রূপে এই মন্দিরে পুজো করা হয়। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, মা অম্বিকা বেঁচে আছেন। অম্বিকানগর মন্দিরে প্রাচীন আচার-অনুষ্ঠান অনুযায়ী প্রতিবছর দুর্গাপুজো হয়। দুর্গাপুজোর সময়ে শহরের কোলাহল থেকে দূরে অম্বিকানগর মন্দিরের দুর্গাপুজোয় থাকতে পারেন। ভালো লাগবে।এছাড়া ঘাস ও বাঁশের বেত দিয়ে তৈরি করা হস্তশিল্পের বিভিন্ন কাজ এখানে দেখতে পাবেন। পচ্ছন্দমতো জিনিস কেনাকাটাও করতে পারেন।
কিভাবে যাবেন:-
আকাশ পথে
বাঁকুড়ার নিকটতম বিমানবন্দর হলো কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বাঁকুড়া থেকে দূরত্ব প্রায় ২১২ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে ক্যাব, বাস বা ট্রেনে করে বাঁকুড়া যেতে পারেন। বাঁকুড়া থেকে ক্যাব বা বাসে মুকুটমণিপুর যেতে হবে।
রেল পথে
কলকাতা থেকে বাঁকুড়ার রেলপথে দূরত্ব ২৩৩ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার নিয়মিত ট্রেন পাওয়া যায়। বাঁকুড়া থেকে ক্যাব বা বাসে মুকুটমণিপুর যেতে হবে।
সড়ক পথে
কলকাতা এবং আশেপাশের শহর যেমন আসানসোল, দুর্গাপুর, বর্ধমান, পানাগড় এবং রাজ্যের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সড়কপথে বাঁকুড়ার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। বাঁকুড়া থেকে ক্যাব বা বাসে অনায়াসে মুকুটমণিপুর যাওয়া যাবে।