Saturday, April 26, 2025
Tour & Travel News(Flavour Of Bengal)spot_img
HomeTravelReligiousআগামী রবিবার চলুন মাহেশে, দেখুন বাংলার সুপ্রাচীন রথযাত্রা উৎসব

আগামী রবিবার চলুন মাহেশে, দেখুন বাংলার সুপ্রাচীন রথযাত্রা উৎসব

Spread the love

ওয়েব ডেস্ক : আর মাত্র কয়েকদিন পর রথযাত্রা উৎসব। সারা দেশের পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে এই উৎসবে মেতে উঠবেন মানুষ। এবার সপ্তাহ শেষে ছুটির দিন অর্থাৎ রবিবার রথযাত্রা উৎসব। ওড়িশার পুরীর রথযাত্রা উৎসব দেখতে যাওয়ার সুযোগ যাদের সামনে নেই, তাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে মাহেশের রথযাত্রা উৎসব। ফলে কলকাতার কাছে শ্রীরামপুর শহরের মাহেশে তারা রথযাত্রা উৎসব দেখতে যেতে পারেন। ভালো লাগবে। ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং বাংলার প্রাচীনতম রথযাত্রা উৎসব হলো মাহেশের রথযাত্রা উৎসব। ১৩৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে রাজ্যের শ্রীরামপুর শহরের মাহেশে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রথযাত্রার সময় মাহেশের স্নানপিড়ি ময়দানে এক মাস ধরে মেলা চলে। মাহেশ জগন্নাথ দেবের মূল মন্দির থেকে মাহেশ গুন্ডিচা মন্দির (মাসির বাড়ি) পর্যন্ত জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার ৫০ ফুট উচু রথটি টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। উল্টোরথের দিন আবার রথটিকে জগন্নাথ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়।
প্রসঙ্গত, এই রথযাত্রা নিয়ে একটি কিংবদন্তি রয়েছে। চতুর্দশ শতকে এক বাঙালি সাধু পুরীতে তীর্থ করতে গিয়েছিলেন। তাঁর নাম ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী।ধ্রুবানন্দের ইচ্ছে হয় যে, জগন্নাথদেবকে নিজের হাতে ভোগ রেঁধে খাওয়াবেন তিনি। কিন্তু তাঁর ইচ্ছেয় বাঁধা হয়ে যায় পুরীর মন্দিরের পাণ্ডারা। ক্ষুব্ধ ধ্রুবানন্দ আমরণ অনশনে বসেন। তিন দিন পর জগন্নাথদেব তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, ‘ধ্রুবানন্দ, বঙ্গদেশে ফিরে যাও। সেখানে ভাগীরথী নদীর তীরে মাহেশ নামেতে এক গ্রাম আছে। সেখানে যাও। আমি সেখানে একটি বিরাট দারুব্রহ্ম (নিম গাছের কাণ্ড) পাঠিয়ে দেবো। সেই কাঠে বলরাম, সুভদ্রা আর আমার মূর্তি গড়ে পূজা করো। আমি তোমার হাতে ভোগ খাওয়ার জন্য উদগ্রীব’। এরপর ধ্রুবানন্দ মাহেশে এসে সাধনা শুরু করেন। তারপর এক বর্ষার দিনে মাহেশ ঘাটে একটি নিমকাঠ ভেসে আসে। জল থেকে সেই কাঠ তুলে তিন দেবতার মূর্তি বানিয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ধ্রুবানন্দ।আরও জানা যায় যে, সন্ন্যাস গ্রহণের পর শ্রীচৈতন্য পুরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পথে মাহেশে পৌঁছোন। ধ্রুবানন্দের মন্দির দর্শনের পর জ্ঞান হারিয়ে গভীর সমাধিতে মগ্ন হন শ্রীচৈতন্য। মাহেশকে ‘নব নীলাচল’ অর্থাৎ ‘নতুন পুরী’ বলে নামকরণ করেন তিনি।পরে বৃদ্ধ ধ্রুবানন্দ তাঁকে মন্দিরের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন মহাপ্রভু তাঁর শিষ্য কমলাকার পিপলাইকে মন্দিরের ভার দেন। এর কিছুদিন পর ধ্রুবানন্দ প্রয়াত হন। মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সেখানে থাকতে শুরু করেন কমলাকার । ৬২০ বছর আগে তিনিই এই বিখ্যাত রথ উৎসব শুরু করেন। তাঁর উত্তরাধিকারীরা এখনও সেবাইত হিসেবে মাহেশে বসবাস করেন।
উল্লেখ্য, শ্রীরামকৃষ্ণদেব ও তাঁর স্ত্রী মা সারদা দেবী, নাট্যকার গিরিশ চন্দ্র ঘোষ, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ মাহেশের রথযাত্রা ও মেলা পরিদর্শনে এসেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারানী’ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ছিল মাহেশের রথের মেলা। মাহেশের রথযাত্রা নিয়ে আরও তথ্য জানার জন্য ‘মাহেশ লর্ড জগন্নাথ ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট’-এর ওয়েব সাইট (maheshjagannath.org)-এ চোখ রাখতে পারেন। জানা গিয়েছে, এবছর আগামী ৭ জুলাই রবিবার বিকেল ৪টে নাগাদ মাহেশের স্নানপিড়ি ময়দানের সামনে থেকে রথযাত্রা শুরু হবে। জিটি রোড ধরে এক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মাসির বাড়ি যাবে সেই রথ। লাখ লাখ দর্শনার্থী এই রথযাত্রায় সামিল হয়। ফলে মাসির বাড়ি যেতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা। আবার ৮ দিন পর উল্টোরথের দিন ওই পথেই স্নানপিড়ি ময়দানে ফিরে আসে সেই রথ। মাহেশের রথযাত্রা উপলক্ষে প্রায় মাসখানেক ধরে মেলা বসে। মাহেশ লর্ড জগন্নাথ ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, জগন্নাথ দেবের মন্দিরে ভোর সাড়ে ৪টেয় শুরু হয় মঙ্গল আরতি, স্নান ও পুজোর সময় সকাল ৭টা, বিশেষ পুজো ও বাল্যভোগের সময় সকাল ১০টা, অন্ন ভোগের সময় বেলা সাড়ে ১২টা, শীতল ভোগের সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা এবং মন্দির বন্ধ হয় রাত ৯টায়। ট্রাস্টের কোনও গেস্ট হাউস না থাকলেও মাহেশের রথযাত্রা উৎসব দেখার জন্য থাকতে চাইলে শ্রীরামপুরে একাধিক হোটেল পাবেন। আর শ্রীরামপুরের সঙ্গে রেল ও সড়ক পথে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের এবং দেশের যোগাযোগ রয়েছে।

Santanu Chatterjee
Santanu Chatterjeehttps://flavourofbengal.com
Santanu Chatterjee is a Tax & Financial Consultant and Food Safety Mitra by profession.But he is an amateur wildlife and bird photographer,He also loves to travel, so model photography and travel photography are very important to him.,He is also a Journalist, Tour Facilitator (Indian Tourism Government of India), Tourist Guide (West Bengal Government).
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Translate »